অনলাইন ডেস্ক ।। বর্তমান পৃথিবীর বুকে চলছে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। করোনাভাইরাস মহামারীর ছোবলে বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্য যেমন ভীষণ হুমকির মুখোমুখি তার যুগপথ প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিও টালমাটাল। এ মুহূর্তে বিশ্বের সবার মনে যে প্রশ্নটি বেশ জোরালো হয়ে দেখা দিয়েছে তা হলো- পৃথিবী কি আবার আগের রূপে ফিরবে যেমনটি ছিল ‘প্রি কোভিড পিরিয়ড’ অর্থাৎ করোনা সংক্রমণ শুরু হবার পূর্বের অবস্থায়? এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের মত হলো- পৃথিবী হয়তো পূর্বের রূপে আর ফিরবে না! তাহলে?
তাহলে, পৃথিবী পরিবর্তিত স্বাভাবিক রূপ ধারণ করবে যা ইতোমধ্যে ‘দ্য নিউ নরমাল’ নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে। সঙ্গত কারণে অর্থনীতিও পরিবর্তিত নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে- এটিই হলো ‘দ্য নিউ নরমাল ইকোনমিক্স’ বা নতুন স্বাভাবিক অর্থনীতি। মূলত অভিযোজিত এই নতুন অর্থনৈতিক রূপান্তর, ভবিষ্যতের বাকবদল নিয়ে আলোচনা এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এর প্রভাব কেমন হবে তা এখন বেশ চিন্তার বিষয়।
যা হোক, ধারণা করা যায়, অর্থনীতিতে আসছে নিউ নরমাল ইকোনমিক্সের প্রধান রূপান্তরটি ঘটবে ‘সেবা’ খাতে। যেসব প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবর্গ বিভিন্নভাবে জনগণকে নানা ধরনের সেবা প্রদান করছেন, এই সময়ে তাদের কার্যকৌশলে বিশেষত অপারেশনাল ম্যানেজমেন্টে বড় পরিবর্তন আসবে, আনতে হবে। কেননা, জনগণ আগামী দিনগুলোতে ঘরে বসেই সব ধরনের সেবা পেতে আগ্রহী হয়ে উঠবেন সঙ্গত কারণেই প্রতিষ্ঠানসমূহকে তাদের সেবাসমূহের ডিজিটালাইজড মাধ্যমে কাস্টমারদের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এটি দ্রুত করতে পারবেন তারা সারভাইভ করবেন কিন্তু যারা এটি পারবেন না করোনাকাল দীর্ঘস্থায়ী হলে তারা ভীষণভাবে পিছিয়ে যাবেন, এমনকি প্রতিযোগিতার বাজার থেকে হারিয়ে যাবার সম্ভাবনাও রয়েছে! মূলত সেবা খাতের সার্বিক ডিজিটালাইজেশন এবং হোম সার্ভিস সিস্টেমই হবে দ্য নিউ নরমাল ইকোনমিক্সের প্রধান বাঁক বদল। সারাবিশ্বে এই নতুন ধারা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখার সুযোগ আমাদেরও থাকবে না! সুতরাং এখনই সময় দেশের সেবা খাতে আর্থিক গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পূর্বে-উল্লিখিত ‘নিউ নরমাল ইকোনমিক্স’ এর ধারণা মাথায় রেখে সামনের দিকে এগিয়ে চলার।
এছাড়া অন্যতম আর্থিক সেক্টরটি হলো ‘উৎপাদনশীল’ খাত। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছোট-বড় কলকারখানাগুলোতেও করোনা পরিস্থিতি প্রভাব ফেলেছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না! এ খাতের বড় পরিবর্তনটি ঘটবে হয়তো প্রতিষ্ঠানের ‘জনবল’ বা কর্মীদের প্রসঙ্গে। শিল্প-কারখানাগুলো ধীরে ধীরে কর্মীদের ‘ম্যানুয়াল’ উৎপাদনশীল কর্মকা- থেকে ছাঁটাই করে বিশেষত রোবট এবং অন্যান্য যান্ত্রিক প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকে পড়বে। উৎপাদনের পরবর্তীতে মার্কেট যাচাই এবং সার্ভের কাজটিও কলকারখানাগুলো অনলাইনেই সম্পন্ন করবে ভবিষ্যতে, ফলে এক্ষেত্রেও মানুষের জায়গা দখল করে নিবে প্রযুক্তি। সর্বশেষ পর্যায়ে বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়াটি হয়তো ‘ম্যানুয়াল এবং ডিজিটাল’ উভয় মাধ্যমে সংঘটিত হবে। অর্থাৎ পাইকারি শিপিং কার্যক্রম বলতে গেলে আগের মতই থাকবে এবং খুচরা বিপণন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড উপায়েই চলবে। সঙ্গতকারণে আমাদের দেশের শিল্প-কারখানাগুলোকেও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি যদি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে তারা টিকে থাকতে চান।
পরিশেষে বলা যায়, ‘দ্য নিউ নরমাল ইকোনমিক্স’ হবে মূলত প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতি। আমাদের ভবিষ্যত অর্থনীতি সচল এবং সমৃদ্ধ রাখতে- অর্থনীতিকে যান্ত্রিক ও প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢেলে সাজাতে হবে। অবশ্য এই ‘দ্য নিউ নরমাল ইকোনমিক্স’ বা নতুন স্বাভাবিক অর্থনীতি এর বড় একটি ঋণাত্মক প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানের উপরে, বেড়ে যেতে পারে বেকারত্বের আরও ভয়াবহতা! সে বিষয়টি এখনই মাথায় রেখে আমাদের মানব সম্পদকে প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ করে তুলতে হবে যাতে করে নতুন পরিস্থিতিতে দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকা-ে তারা সম্পৃক্ত হতে পারেন এবং অভিযোজিত অর্থনীতিতে নিজের জায়গা দখল রাখতে এবং নতুন শূন্যস্থান পূরণ করতে পারেন। সুতরাং, আসন্ন ‘দ্য নিউ নরমাল ইকোনমিক্স’-র অভিযোজন প্রক্রিয়ায় আমাদের এখনই সংযুক্ত হতে হবে তথ্যপ্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে। তাহলে হয়তো বর্তমান করোনাকালীন ধাক্কা দ্রুত সামলে নেয়া সম্ভব হবে।
0 Comments